বৃক্ষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এর গুঁড়ির ব্যস বৃদ্ধি পায়। কান্ডের বাঁকলের কাছে প্রতিবছর নতুন নতুন কোষস্তর তৈরি হয় যার ফলে গাছের ব্যস বেড়ে যায়। কিন্তু এই কোষস্তর তৈরি হার সারা বছর একই থাকে না। বসন্তে অনুকূল পরিবেশে নতুন নতুন ডাল ও পাতা গজায় গাছে এবং এই সময় গুড়ির ব্যসও বৃদ্ধিপায় অপেক্ষাকৃত দ্রুত। এই সময় কোষের আকার বড় হয়, ঘনত্ব কম হয় এবং কোষের রংও হালকা দেখায়।
অপরদিকে বসন্ত শেষ হয়ে গেলে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। এই সময় যে কোষ উৎপন্ন হয় সেগুলো সাধারণত আকারে ছোট, অপেক্ষাকৃত ঘন এবং গাঢ় রংয়ের হয়ে থাকে। ফলে প্রতিবছর গাছের গুড়ির চার পাশে বৃত্তাকারে হালকা ও গাঢ় রংএর রিং উৎপন্ন হয়। এবং যেহেতু এই রিং বছরের সাথে সম্পর্কিত এবং প্রতিবছর একটি করে হালকা ও গাঢ় রিং উৎপন্ন হয় তাই এই রিং গণনা করে একটি গাছের বয়স বলে দেওয়া যায় খুব সহজে। শুধু বয়সই নয়, রিংএর পুরুত্ব নির্ণয় করে কোন বছর ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া কেমন ছিলো তা-ও বলে দেওয়া সম্ভব যেমন খরার বছরে রিং গাঢ় এবং পাতলা হবে আর যে বছর বৃষ্টি বেশি হবে সেই বছরের রিং হালকা এবং মোটা হবে।
বিংশ শতকে প্রথমভাগে জোতির্বিদ এ. ই. ডগলাস বৃক্ষচক্রীয় কালনিরূপণবিজ্ঞান প্রবর্তন করেন। তাঁর হাতেই অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষ-চক্র গবেষণা পরীক্ষাগার গড়ে উঠে। ডগলাস সৌরকলঙ্কের কার্যকলাপের আবর্তন ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করেন এবং যুক্তি দেন যে, সৌর কার্যকলাপের পরিবর্তন পৃথিবীর জলবায়ুর রীতিকে প্রভাবিত করে যা পরবর্তীকালে বৃক্ষ-চক্রের বৃদ্ধির নমুনা দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়।
বৃক্ষের কান্ডের অনুভূমিক প্রস্থচ্ছেদ করলে বৃদ্ধি চক্র বা বৃক্ষ চক্র বা বর্ষবলয় দেখতে পাওয়া যায়। বৃদ্ধি চক্র হল ভাস্কুলার ক্যাম্বিয়ামের (বাকলের কাছাকাছি একটি কোষের স্তর যাকে পার্শ্বীয় ভাজক কলা বলা হয়) নতুন বৃদ্ধির ফলাফল। ব্যাসের এই বৃদ্ধি, সেকেন্ডারি বৃদ্ধি বলে পরিচিত। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বৃদ্ধির গতির পরিবর্তনের পরিণাম হল এসব দৃশ্যমান চক্র। একটি চক্র দিয়ে এক বছর সময়কাল নির্দেশিত হয়। শীতপ্রধান অঞ্চলে ঋতুর মধ্যে বিশেষ পার্থক্য থাকার কারণে এসব চক্র অধিকতর দৃশ্যমান হয়।
ডেনড্রোক্রোনোলজিতে ব্যবহার করার জন্য ওক একটি অত্যন্ত পছন্দের প্রজাতি - প্রকৃতপক্ষে, বিশ্বের যে কোনো স্থানে দীর্ঘতম ক্রমাগত ট্রি-রিং কালানুক্রম ইউরোপে বিকশিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এর দৈর্ঘ্য প্রায় 10,000 বছর।